রুহুল আমীন খন্দকার, ব্যুরো প্রধান ::
আমের রাজধানী নামে পরিচিত চাঁপাইনবাবগঞ্জে শেষ মুহুর্তে জমে উঠেছে আমের বাজার। আমের রাজধানী যদি চাঁপাইনবাবগঞ্জ হয়, তবে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে কানসাট। কেননা, এখানেই বসে দেশের সবচেয়ে বড় আমবাজার। এখানে শেষ সময়ে ভালো দাম পেয়ে করোনা ভাইরাস ও ঘূর্ণিঝড় আমপানের ভয়াবহতা কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে চাষী ও ব্যবসায়ীরা। এবছর প্রত্যাশার চেয়েও ভালো দামে আম কেনা-বেচা হয়েছে। ফলে পুষিয়ে যাবে বিগত বছরের লোকসান গুলো।
বর্তমানে বাজারে আশ্বিনা আম বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ৪২শ’ টাকা থেকে ৪৮শ’ টাকা পর্যন্ত। যা গত বছরে এই আম বেচা-কেনা হয়েছে মাত্র ১৪শ’ থেকে ২ হাজার টাকা মণ দরে। কৃষি বিভাগের তথ্যানুয়ায়ী এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৩৩ হাজার ৩৫ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়।
দেশের সবচেয়ে বড় আম বাজার চাঁপাইনবাবগঞ্জের খ্যাতনামা কানসাট আম বাজারসহ অন্যান্য আম বাজার ঘুরে দেখা গেছে শেষ মুহুর্তে জমে উঠেছে আশ্বিনা আমের বাজার। এখানে ল্যাংড়া, খিরশাপাত, ফজলী ও আম্রপালী গাছ থেকে নামানো শেষ হয়েছে আগেই। এখন চলছে সর্বশেষ আশ্বিনা আম নামানো।
শেষ মুহুর্তে ভাল দাম পেয়ে লাভবান হচ্ছেন আমচাষী ও ব্যবসায়ীরা। এবছর প্রত্যাশার চাইতে বেশি দামে আম কেনা-বেচা হয়েছে বলে জানা গেছে। এখন কানসাট আম বাজার ভরা মৌসুমের মত হয়ে উঠেছে। আর শেষ মুহুর্তে আমের চাহিদা বেশি থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমে বাজার গুলো মুখরিত হয়ে উঠেছে।
বিক্রির উদ্যেশ্যে কানসাট বাজারে আম নিয়ে আসা বেশ কয়েকজন আম ব্যবসায়ী গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর আমের বাজার বেশ ভালো। আমরা কখনো আশা করতে পারিনি যে, আশ্বিনা আম ৫ হাজার টাকা মন বিক্রি করতে পারবো। বিগত দিনে আমের দাম না পাওয়ায় অনেক আম চাষী পানির দামে গাছে থাকতেই আম বিক্রি করেছে। অল্প দামে বাগান কিনে অনেক ব্যবসায়ী এবার লক্ষ লক্ষ টাকা লাভ করেছে। আম চাষীরা জানান, আগের বছরের চেয়ে এবছর আমের চাহিদা ভালো থাকায় আমের দাম বেশি পাওয়া যাচ্ছে। বাইরের ক্রেতা এসে আম কেনায় বাজার বেশ চাঙ্গা রয়েছে।
এ ব্যাপারে শিবগঞ্জের কানসাট আম আড়ৎদার সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি কাজী এমদাদুল হক গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, শেষ মুহুর্তে হলেও এখনও আমের বাজার শেষ হয়ে যায়নি। বাজারে আরও এক মাসের মত আম থাকবে। তবে করোনা ও আমপানের প্রভাবে শুরুতে যেভাবে আম ব্যবসায় ক্ষতি হয়েছিল, সেটি এখন পূরণ হয়ে যাচ্ছে। শেষ মুহুর্তে আম ব্যবসাযী ও চাষীরা দেখছেন লাভের মুখ।
তিনি আরো জানান, এখন প্রতিদিনই এখান থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আম যাচ্ছে। কানসাটে বাজারে গড়ে প্রতিদিন ২৫/২৬ কোটি টাকার আম বেচাকেনা হয়েছে। শেষ মুহুর্তে এটি আরও বেড়েছে। তবে আমের পরিমান এখন একটু কমেছে। এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে শুধুমাত্র আম পরিবহন হয়েছে ১৮ হাজার ট্রাক।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নজরুল ইসলাম জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ভালো দাম পাওয়া গেছে। যদিও আমপান ও করোনার প্রভাব ছিলো। তবে শেষ মুহুর্তে দাম ও চলতি মৌসুমে দাম ভালো পাওয়ার কারণে এবার চাষীরা আগের ক্ষতি পুরণ করে ফেলেছে।